শোল মাছ (Shol Fish, Channa Striata) একটি অনন্য প্রজাতি যা বিশ্বের অনেক জায়গায় পাওয়া যায়। তারা অত্যন্ত সামাজিক প্রাণী, তাদের প্রজাতির অন্যান্য মাছের পাশাপাশি অন্যান্য ধরণের জলজ জীবনের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এবং বড় দল গঠন করে।
শোল মাছের আচরণ অধ্যয়নের জন্য আকর্ষণীয়, কারণ তারা তাদের নিজস্ব গোষ্ঠীর মধ্যে এবং অন্যান্য প্রজাতির সাথে জটিল সম্পর্ক তৈরি করে। উপরন্তু, শোল মাছের বিশেষ অভিযোজন বিবর্তিত হয়েছে যা তাদের বিস্তৃত জলজ আবাসস্থলে বেঁচে থাকতে সক্ষম করে।
শোল মাছের উৎপত্তি (Origin of Shol Fish)
শোল মাছের শ্রেণীবিন্যাস (Taxonomy of Shol Fish)
- Kingdom: Animalia
- Phylum: Chordata
- Class: Actinopterygii
- Order: Anabantiformes
- Family: Channidae
- Genus: Channa
- Species: C. striata
শোল মাছের বৈজ্ঞানিক নাম? (Scientific name of Shol Fish): Channa striata
শোল মাছ ইংরেজি in English: Shol Fish
শোল মাছের প্রাপ্তিস্থান (Geographic Distribution of Shol Fish)
দক্ষিণ এশিয়ার সর্বত্র এ মাছ পাওয়া যায়। থাইল্যান্ড ও মায়ানমারেও এ মাছ পাওয়া যায়।
শোল মাছের আবাসস্থল বা বাসস্থান (Habitat of Shol Fish)
পুকুর, ডোবা, খাল, বিল, জলাভ‚মি প্রভূতি সব রকমের জলাশয়ে এরা বাস করে ।
মাছের প্রজনন (Reproduction of Shol Fish)
শোল মাছের প্রজননকাল বর্ষার সময়। তবে বছরের যে কোনো সময়ই এরা প্রজনন করতে পারে। টাকি মাছের মত শোল মাছও বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
শোল মাছ কি কি খাবার খায়, শোল মাছের খাদ্যাভ্যাস (Feeding Habit)
শোল মাছ রাক্ষুসে মাছ হিসেবে পরিচিত। এরা সব কিছুই খায়। অর্থাৎ এরা সর্বভুক প্রাণী।
মাছের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য | শারীরিক বৈশিষ্ট্য (দৈহিক গঠন) (Body Features of Shol Fish)
শোল মাছের দেহের রং কালচে বাদামি। দেহ লম্বা ও নলাকার। সমস্থ দেহে কালো কালো ছোপ আছে। এর লেজের পাখনা কাস্তের মতো। সারা দেহ পাতলা আঁশে ঢাকা।
শোল মাছের ছবি | বড় শোল মাছের ছবি (Picture of Shol Fish)
পুষ্টিমান
প্রতি ১০০ গ্রাম শোল মাছে ২১.০ গ্রাম প্রোটিন, ২.২ গ্রাম ফ্যাট, ৩৬০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম ও ২৯৮ মি.গ্রা. ফসফরাস থাকে।
শৈল মাছ চাষের সুবিধা (Benfits of Shol Fish Culture)
ছোট,অগভীর ও অক্সিজেনের অভাব রয়েছে এমন সব জলাশয়ে মাছ চাষ করা সম্ভব এর কারন রয়েছে বাড়তি স্বাশযন্ত্র সুতরাং প্রয়োজন বোধ করলে পানির উপর ভেসে উঠে অক্সিজেনের অভাব পূরন করে নেয়।
এ মাছ এখন আর শুধু নি¤œবিওের চাহিদা মেটায় না তাই বাজারে এ মাছের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। স্বাদ ও পুষ্টির বিচারেও এ মাছের স্থান এখন অনেক উপরে। এ মাছ দ্রুত বাড়ে। কাজেই রুই কাতলার মত ওজনে ভারি না হলেও সংখ্যার দিক থেকে মাছ চাষির পুষিয়ে যায়।
এ মাছের চাষ করতে গিয়ে বিশেষভাবে খাবারের জন্য ঝামেলায় পড়তে হয় না। কারন তলার কাদা থেকে ওরা খাবার সংগ্রহ করে। আর খায় ছোট ছোট পোকা মাকড় এবং জলজ উদ্ভিদ। এগুলো এঁদো পুকুরে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়।
তবে বাইরে থেকে কিছুটা খাবার নিয়মিত দিলে ওজনটা ভালোই বাড়ে। এ মাছেরে জন্য প্রণোদিত প্রজননের প্রয়োজন নেই। সারা বছরি স্বাভাবিক ভাবে প্রজনন করে তবে বর্ষাকালে উদ্যমটা বেশি হয়। সুতরাং এ মাছের পোনা সহজেই জোগাড় করা যায়।
শোল মাছ চাষ (Shol Fish Culture System)
পুকুর নির্বাচন
আগেই বলা হয়েছে যে এ মাছের জন্য পুকুর নির্বাচন করতে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। পুকুরে সারা বছর পানি থাকা প্রয়োজন, তবে শুকনা মওসুমে দু’হাত পানি থাকলেই চলবে কারণ এ মাছ পাকের মধ্যে থাকতে পছন্দ করে।
পোনা মজুদ
শোল মাছের পোনা বিঘা প্রতি ৫০০০ – ৬০০০ টি (৪ ইঞ্চি) পুকুরে মজুদ করা হয়। এর সঙ্গে কয়েকটা বড় দেখে এবং যাদের পেটে ডিম রয়েছে তেমন মাছ ছাড়লে খুব ভাল হয়। কারন ঐ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ওরাই পুকুরে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে।
বছরের যে কোন সময় থেকে এ মাছের চাষ শুরু করা যায় তবে মাঘ মাসের শেষে অথবা বর্ষার পর শুরু করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
শোল মাছের ফিড, সম্পূরক খাদ্য
প্রতিদিন দুবার করে মোট মজুদ মাছের ৩ শতাংশ হিশেবে নি¤œমানের শুকানো সামুদ্রিক মাছ পানিতে ভিজিয়ে পরিপূরক খাবার হিসেবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। এ পুকুরে সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন নেই।
এ পদ্ধতিতে চাষ করে ৬-৭ মাসে বিঘা প্রতি ৬০০-৭০০ কিলো শোল (একক চাষে) উৎপাদন করা সম্ভব। বছরে দু’বার মাছ ধরা যেতে পার্
শোল মাছ ধরা ও বাজারজাতকরণ
পরিণত অবস্থায় শোল মাছ লম্বায় দেড় ফুটের মত লম্বা হয়। ওজন ৫ কেজি পযর্ন্ত হয়। শোল মাছ এক ফুটের মত হলেই শক্ত জাল দিয়ে ধরে বাজারজাত করা উচিত। বর্তমানে প্রতি কেজি শোল মাছের দাম ৮০ থেকে ১২০ টাকা।
শোল মাছের রোগবালাই (Disease and Treatment of Shol Fish)
ধাক্ষেতে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শোল মাছের শরীরে নানা ধরনের ক্ষতরোগের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও লেজ পচা ও ফুলকা পচা রোগেও এ মাছ আক্রান্ত হচ্ছে।