মৃগেল মাছ (Mrigal Fish) কার্প পরিবারের একটি প্রজাতির রে-ফিনাযুক্ত মাছ। একে Cirrhinus mrigala, Cirrhinus cirrhosus, Morakhi, Moree, White carp এবং Mrigal Carp Fish ও বলা হয়।
মৃগল কার্প (Cirrhinus cirrhosus), যা সাদা কার্প নামেও পরিচিত, কার্প পরিবারের একটি প্রজাতির রে-ফিনাযুক্ত মাছ। বিশেষ করে রুই এবং কাতলা মাছের সাথে চাষ করা খুবই জনপ্রিয়।
মৃগেল মাছের উৎপত্তি (Origin of Mrigal Fish)
আজ, মৃগল মাছ ভারত, মায়ানমার, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, লাওস, থাইল্যান্ড এবং নেপালের মাছ চাষ ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে।
এটি চীন, মরিশাস, জাপান, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা এবং ভিয়েতনামেও পাওয়া যায়।
মৃগেল মাছের শ্রেণীবিন্যাস (Taxonomy)
- Kingdom রাজ্য: প্রাণী
- Phylum: কর্ডাটা
- Class শ্রেণী: Actinopterygii
- Order ক্রম: Cypriniformes
- Family পরিবার: Cyprinidae
- Sub Family উপ-পরিবার: Labeoninae
- Genus গণ: Cirrhinus
- Species প্রজাতি: Cirrhinus cirrhosus
মৃগেল মাছের বৈজ্ঞানিক নাম (Scientific Name): Cirrhinus cirrhosus (সিরহিনাস মৃগেলা)
মৃগেল মাছের ইংরেজি নাম (English Name): Mrigal Fish
সাধারণ নাম, বাংলা নাম (Local or Bengali Name): মৃগেল/মিরকা
মৃগেল মাছের প্রাপ্তিস্থান (Geographical Distribution of Mrigal Fish)
মৃগল মাছ তিনটি ভারতীয় প্রধান কার্প মাছের প্রজাতির মধ্যে একটি, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়।
দক্ষিন এশিয়ার সর্বত্র এ মাছ পাওয়া যায়। এটি দীর্ঘদিন ধরে অন্যান্য দেশীয় মাছের প্রজাতির সাথে চাষ করা হয়।
মৃগেল মাছের আবাসস্থল/বাসস্থান (Habitat of Mrigal Fish)
এই প্রজাতিটি দেশের বিস্তীর্ণ ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, বিশেষ করে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিতাস, সাঙ্গু নদী থেকে এবং হালদা নদী পাওয়া যায়। খাল, বিল, নদী, পুকুর, হাওড়বাওড় প্রভৃতি জলাশয়ে পানির নিচে বাস করে।
মৃগেল মাছের খাদ্যাভ্যাস (Feeding Habit)
মৃগেল মাছ জলাশয়ের নিচের স্তরে বাস করে এবং সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে। পচা জলজ উদ্ভিদ, পোকামাকড়, মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ ও কাদামাটি মৃগেল মাছের প্রিয় খাদ্য।
মৃগেল মাছের প্রজনন (Reproduction)
এটি মে-জুলাই মাসে নির্বাচিত নদীগুলির অগভীর অংশে প্রজনন করে। প্রাকৃতিক পরিস্থিতিতে, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে অগভীর নতুন প্লাবিত জলাভূমি এবং বা নদীর শাখায় প্রজনন ঘটে।
এরা সাধারণত ০.৫-১.০ মিটার পানিতে প্রজনন করে। একটি ৬ কিলোগ্রাম (১৩ পাউণ্ড) নারী মাছ এক মিলিয়ন পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। কৃত্রিম প্রজনন এই মাছের প্রজাতির জন্য খুবই জনপ্রিয়।
এ মাছের প্রজনন সাধারণত বর্ষাকাল। মৃগেল মাছ এক বছরের মাথায় এক হতে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এ মাছ এক বছরে যৌবনপ্রাপ্ত হয়। মৃগেল মাছের ভালো ডিম পেতে হলে পর্যাপ্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার সেই সময়ে পুকুরে দিতে হবে।
যেহেতু মৃগেল মাছ বদ্ধ পানিতে ডিম পাড়ে না সেজন্য এ মাছ হতে ডিম সংগ্রহ করে কৃত্রিম উপায়ে প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়।
বাংলাদেশের অনেক জায়গায় হ্যাচারি থেকে মৃগেল মাছের পোনা সংগ্রহ করা যেতে পারে।
মৃগেলের হ্যাচলিংগুলি সাধারণত পৃষ্ঠ বা উপ-পৃষ্ঠের জলে থাকে এবং পরিপক্ক মাছ নীচের বাসিন্দা।
মৃগল মাছ দ্রুত উৎপাদক। এগুলি সাধারণত মিঠা পানির একটি প্রজাতি, উচ্চ স্তরের লবণাক্ততাও সহ্য করতে পারে না।
মৃগেল মাছের শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য | শারীরিক বৈশিষ্ট্য (দৈহিক গঠন, Mrigal Fish Characteristics or Body Feature)
মৃগেল মাছের মাথা খুবই ছোট এবং মুখের গহ্বর বড়। এর ঠোঁট দুটি পাতলা। মৃগেল মাছের দেহ রুই ও কাতলা মাচের তুলনায় সরু ও লম্বাটে।
এর গায়ের রং পিঠের দিকে তামাটে, দু’পাশ ও পেট রূপালি। এ মাছের চোখ সোনালি। পরিনত মাছ লম্বায় ৩ ফুট বা নব্বই সে.মি হয়।
মৃগেল মাছ অনেক বড় হতে পারে। তাদের শরীর দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমানুপাতিক এবং সুশৃঙ্খল। গভীরতা প্রায় মাথার দৈর্ঘ্যের সমান।
মৃগাল মাছের পেকটোরাল ফিনগুলি মাথার চেয়ে ছোট, এবং পায়ুসংক্রান্ত ফিন কডাল ফিন পর্যন্ত প্রসারিত হয় না।
একটি বালি বা মাটির স্তর উপর ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার (২০ থেকে ৩৯ ইঞ্চি) গভীরতার সাথে জলাশয়ের প্রান্তিক অঞ্চলে স্প্যানিং ঘটে।
দুই বছর বয়সে ব্যক্তি সেন্টিমিটার (২৪ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্যে পৌঁছাতে পারে এবং ২ কিলোগ্রাম (৪.৪ পাউণ্ড) পর্যন্ত ওজন করতে পারে।
তাদের শরীর cycloid স্কেল সঙ্গে আচ্ছাদিত করা হয়, এবং তাদের মাথা এবং মুখ ভোঁতা উপর কোন স্কেল আছে। তাদের মুখ টি বিস্তৃত, আড়াআড়ি (উপরের ঠোঁট সম্পূর্ণ এবং নীচের ঠোঁটের সাথে অবিচ্ছিন্ন নয়)।
আকৃতি, আকার এবং রঙ, মৃগেল মাছ দেখতে কেমন?
মৃগল মাছের শরীরের রঙ সাধারণত পিঠে গাঢ় ধূসর এবং পাশে এবং পেটে রূপালী হয়। তাদের পাখনা ধূসর রঙের, শ্রোণীর টিপস, এবং কডলের নীচের লোবটি কমলা রঙের (বিশেষ করে প্রজনন ঋতুতে) টিং করা হয়।
মৃগেল মাছের স্বাদ ও পুষ্টিমান
ভারতীয় কার্পগুলি অন্যান্য বিদেশী কার্প প্রজাতির তুলনায় একটি সুস্বাদু খাবার হিসাবে বিবেচিত হয় এবং উচ্চমূল্যের জন্য বিক্রি হয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম মৃগেল মাছে ১৯.৫ গ্রাম প্রোটিন, ২.৬ গ্রাম ফ্যাট, ৩৩৫ মি.গ্রা.ক্যালসিয়াম ৩৮২ মি.গ্রা, ফসফরাস থাকে।
মৃগেল মাছের উপকারিতা অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic Importance of Mrigal Fish)
যদিও মৃগেল বাংলাদেশের অতি পরিচিত পুরানো মাছ। তবুও তা খুব জনপ্রিয় নয়।বিশেষ করে অনেক মহিলা এ মাছ খেতে চান না।
১৯৪০-এর দশকের গোড়ার দিকে এবং ১৯৫০-এর দশকে এবং ১৯৬০-এর দশকে অন্যান্য এশীয় দেশগুলিতে ভারত জুড়ে জলজ চাষের প্রবর্তন শুরু হয়েছিল।
মৃগেল মাছ দ্রুত বর্ধনশীল নয় তবে লম্বায় বেশ বড় হয়। তাই এক বছরের কম বয়সের মৃগেল ধরা বা বাজারজাত করা উচিত নয়।
এক বছরের মৃগেল মাছের চাহিদা বাজারে বেশি। বর্তমানে এ মাছ প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দামে বিক্রি হয়।
মৃগেল মাছের রোগবালাই (Mrigal Fish Disease)
ক্ষতরোগ মৃগেল মাছের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাধি। এছাড়াও পাখনা পচা, লেজ পচা রোগে মৃগেল মাছ আক্রান্ত হয়। ফুলকা পচা রোগও মাঝে মাঝে দেখা যায়। এতে উকুনের আক্রমন ও হতে পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাস্য (FAQs)
একটি মৃগেল মাছ কত বড় হয়?
এই মাছগুলির মুখটি চোয়ালের কোনও দাঁত থেকে মুক্ত, অন্য সমস্ত কার্প মাছের প্রজাতির মতো। তারা সাধারণত প্রায় ১ মিটার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্যে পৌঁছাতে পারে, যার গড় দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার।
মাছের গড় জীবিত শরীরের ওজন প্রায় ১-২ কেজি, যার সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য প্রায় ১২.৭ কেজি।
মৃগেল মাছের দাম কত?
২৫০-৩৫০ টাকা কেজি
একটি মৃগেল মাছ কতদিন বাঁচে?
অবস্থানের উপর নির্ভর করে, মৃগল মাছ সাধারণত তাদের ১-২ বছর বয়সের মধ্যে পরিপক্কতা অর্জন করে, যখন তাদের দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৪ সেন্টিমিটারে পৌঁছায়।
মৃগেল মাছের কি বিপজ্জনক?
না, মাছটি বিপজ্জনক না।
মৃগেল মাছ কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
মাছ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।