সমন্বিত পদ্ধতিতে মাছ ও গাভী পালন | Integrated Livestock-Fish Farming System

সমন্বিত পদ্ধতিতে মাছ ও গাভী পালন (Integrated Livestock-Fish Farming System) সমন্বয়ের ফলে সার ও সম্পূরক খাদ্য ক্রয়ের পরিমাণ কমে আসে এবং মাছ চাষ থেকে আয় বেড়ে যায়।

গাভী থেকে প্রাপ্ত সার, অর্থাৎ গোবর এবং চনা সহজেই হাত দিয়ে ছড়ানো যায় এবং এতে শ্রম, অর্থ ও শক্তি কম লাগে এবং পরিবেশ ও ভাল থাকে।

একজন খন্ডকালীন মজুর রেখেই ছোট আকারের মাছ চাষ ও গাভী পালন সমন্বয় করা যায়। এতে একদিকে চাষির আয় এবং অন্যদিকে বাজারে মাছ ও দুধের সরবরাহ বেড়ে যায়।

গাভী থেকে প্রাপ্ত সারের সুবিধা

গৃহপালিত পশুর মধ্যে গাভী থেকে পাওয়া সারই পরিমাণে সবচেয়ে বেশি এবং এর সরবরাহও নিশ্চিত।

মাছের খাদ্য তৈরি করতে এই সার অন্যান্য গৃহপালিত পশু থেকে পাওয়া সারের তুলনায় তেমন কিছু নিম্ন মানের নয়। বিশেষ করে সিলভার কার্প, কমনকার্প এবং বিগহেড কার্প মাছ চাষের জন্য এ সার খুবই উপযোগী।

তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠার তুলনায় গোবরের পুষ্টি উপাদান একটু নিম্মমানের। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যে, গরুর খাদ্য হাঁস-মুরগির খাদ্য থেকে তুলনামূলকভাবে সস্তা।

গাভী থেকে প্রাপ্ত সার অত্যন্ত মিহি হয়ে থাকে, ছাগলের বিষ্ঠার মতো বড়িবড়ি নয়। এর ফলে এই সার অন্যান্য পশু সারের তুলনায় পানিতে অনেক বেশি পরিমাণ ভাসতে পারে।

এর অর্থ হলো পানিতে মাছের খাবার সহজেই তৈরি হতে পারে এবং অন্যদিকে পুকুরের তলায় সার স্তুপ না হওয়ার দরুণ অক্সিজেনের ব্যবহার কমে আসে এবং দুষিত গ্যাস তৈরি হতে পারে না।

গাভীর প্রধান খাদ্য হলো ঘাস। গরু খাবার পর বেচে যাওয়া ঘাস মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া পুকুরের জন্য কম্পোস্ট তৈরিতে খড় ব্যবহার করা যেতে পারে।

গরুর জন্য সরবরাহকৃত অন্যান্য খাদ্যের অভিক্ষিত অংশও মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

সমন্বিত পদ্ধতিতে মাছ ও গাভী পালন | Integrated Livestock-Fish Farming System

গরুর ঘর পুকুরের পাশে তৈরি করতে হবে যাতে গাভী থেকে পাওয়া সার সহজেই পুকুরে ব্যবহার করা যায়।

গরুর ঘরের মেঝে পুকুরের পাড় থেকে উঁচু হওয়া উচিত। তাহলে সারের জন্য একটা খাদা কেটে সেখানে গোবর এবং চনা একত্রে জমানো যেতে পারে এবং দুটোর সংমিশ্রণ সরাসরি পুকুরে ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। এতে অনেক সময় ও শ্রম বাচানো যায়।

তবে এই পদ্ধতির সমস্যা হলো এতে পুকুরের নিচে সারের স্তপ হয়ে যাওয়ার এবং অসমানভাবে পুকুরের ছড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সবচেয়ে ভাল হয় যদি সার ও চনার মিশ্রণ নজলের সাহায্যে হোজ পাইপ দিয়ে পানিতে সর্বত্র ছড়িয়ে হয়।

তবে বড় দিঘীতে চলমান নৌকার পশ্চাতে রাখা ফুটো করা পাত্রের সাহায্যে সার ছড়িয়ে দেয়া যায়। বড় দিঘীতে ঢেউও সমানভাবে পানিতে সার মিশে যেতে সাহায্য করে।

যদি মাছ চাষ সম্পূর্ণভাবে গরুর সার এবং অব্যবহৃত গরুর খাদ্যের উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে মাছের নির্বাচন হবে ৯০% সর্বভুক মাছ এবং শুধুমাত্র ১০% তৃণ ভোজী মাছ।

শীতকালে এবং বসন্তের প্রারন্তে প্রতি পাঁচ সাত দিনে বেশি পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে। বসন্ত এবং শরৎকালে প্রতি তিনদিন অন্তর সার প্রয়োগ করতে হবে।

গ্রীম্মকালে চনা/গোবর একটু পচিয়ে প্রতিদিনই অল্প অল্প করে পুকুরে সার দিতে হবে। বর্সাকালে টাটকা গোবর সরাসরি পুকুরে ছাড়তে হবে যাতে বেশি করে উদ্ভিদ কণা তৈরি হয়।

যদি চাষের জন্য তৃণভোজী মাছের পরিমাণ ১০% এর বেশি হয় তাহলে আলাদা করে প্রয়োজনীয় সম্পূরক খাদ্যের জোগান দিতে হবে।

গাভী পালন ও মাছ চাষ সমন্বয়ের জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ খানিকটা বেশি সন্দেহ নাই কারণ দুগ্ধবতী গাভীর দাম প্রচুর তবে লাভের হারও উঁচু। মাত্র তিন বছরই প্রাথমিক বিনিয়োগ উঠে আসবে।

যেসব প্রজাতির মাছের মিশ্য চাষ সম্ভব সেগুলো হলো রুই, মৃগেল, কাতলা, সিলভাসকার্প, বিগহেড কার্প, কমন কার্প ইত্যাদি।

এদের মধ্যেকার অনুপাত হবে প্রতি শতাংশে মোট ২০টি মাছের পোনা ছাড়া হবে, কাতলা ২টি, সিলভার কার্প ৪টি, রুই ৬টি, গ্রাসকার্প ২টি, মৃগেল ৩টি এবং কমন কার্র্প ৩টি।
এক হেক্টর আয়তন পর্যন্ত পুকুরের জন্য দুটি গাভীই যথেষ্ট।

একটি ভাল জাতের গাভী বছরে ১০-১২ টন চনা/গোবর উৎপন্ন করে। যদি বাইরে থেকে কোন খাবার না সরবরাহ করা হয় তাহলে শুধু গোবর/চনা ব্যবহার করে বছরে হেক্টর প্রতি ২-৩ টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব।

দুটি হাইব্রিড জাতের গাভী থেকে প্রাপ্ত গোবর ও চনা একটি এক একর পুকুরে মাছ চাষের সারের জন্য যথেষ্ট। বাড়তি সার কৃষি কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

দশম এবং একাদশ অধ্যায়ে উল্লিখিত পদ্বতি অনুযায়ী পুকুর প্রস্তুতি ও মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করতে হবে।

গাভী পালন: দু’টি গাভী পালনের জন্য প্রয়োজন হবে পর্যাপ্ত মূলধন, দু’টি শষ্কর জাতের গাভী, গাভীর থাকার ঘর, সুষম খাদ্য, স্বাস্থবিধি ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সঠিক প্রজনন। শষ্কর জাতের গাভী দুটি হতে হবে নিরোগ। গর্ভবতী অথবা দুগ¦বতী।

আমি কৃষিবিদ তানজিম আহমেদ, কৃষি বিষয়ক ব্লগার।

You cannot copy content of this page