অধিক লাভজনক মাছের মিশ্র চাষ পদ্ধতির ধাপগুলো (Integrated Fish Culture System)

পুকুরে বিভিন্ন স্তরে জন্মানো খাদ্যের সুষ্ঠ এবং সার্বিক ব্যবহারের মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে খাদ্য গ্রহণের প্রতিযোগিতাহীন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ একত্রে চাষ করাই হলো মিশ্র মাছচাষ।

পুকুরের আবস্থা ভেদে মিশ্রচাষ ২টি প্রজাতি থেকে ৬টি এমনকি ৭টি প্রজাতির মিশ্রণেও হতে পারে।

বর্তমানে মাছের মিশ্র চাষ পদ্ধতির (Integrated Fish Culture) দ্বারা পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপাদিত খাদ্যের যেমন সদ্ব্যবহার হয় তেমনি মাছের উৎপাদনও বেশি পাওয়া যায়, লাভও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।

একটি পুকুর থেকে কিভাবে অধিক ফলন পওয়া যায়, সে সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে আমরা অনেকেই অবহিত নই। যার ফলে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করেও অশানুরূপ ফলন পাই না।

কারও কারও ধারণা পুকুরে একই সাথে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ না করে পছন্দ মত এক প্রজাতির মাছ চাষ করাই ভাল।

কেউ হয়তো ভাবেন কাতলা মাছ তাড়াতাড়ি বড় হয়। তাই অন্যান্য মাছ পুকুরে মজুদ না করে শুধু কাতলার চাষ করলেই হয়তো ফলন বেশী হবে। এ সব ধারণা সঠিক নয়।

আমাদের দেশের অধিকাংশ পুকুর ৫-১২ ফুট গভীর। মাছ চাষ ব্যবস্থাপনার সময় এ সব পুকুরে যখন সার প্রয়োগ করা হয় তখন উদ্ভিদকণা, প্রানীকণা, শেওলা, ক্ষুদে কাটপতঙ্গ, জৈব আবর্জনা ইত্যাদি ধরনের খাদ্যের সৃষ্টি হয়।

আর এগুলো পুকুরের একই স্তরে জন্মায় না। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে এসব খাদ্য সাধারণত পুকুরে তিনটি স্তরে বিদ্যমান থাকে। যথা, উপরের স্তরে মাঝের স্তরে এবং নিচের স্তরে বা তলদেশ।

বর্তমানে দেশে দীঘি/পুকুরগুলোতে যেসব মাছের চাষ হয় সেগুলোর সবার খাদ্য্যাভ্যাস এক রকম নয়। কেউ উদ্ভিদকণা খায়, কেউ প্রণিকণা, কেউ শেওলা আবার কেউ তলার ক্ষুদে পোকা-মাকড় খায়।

তাই যদি কেবলমাত্র কাতলা মজুদ করা হয়, তবে প্রণিকনা ছাড়া অন্য কোনো খাদ্য তারা খাবে না। অর্থাৎ পুকুরে সার প্রয়েগ করে প্রাণিকণার পাশাপাশি অন্যান্য যে সব খাদ্য উৎপন্ন করা হলো তার অপচয় করা হলো।

একই খরচে আরও অন্যান্য জাতের মাছের ও উৎপদন করা সম্ভব হতো তা থেকে বঞ্চিত হতে হলো।

মাছের মিশ্র চাষ পদ্ধতি কি? (What is Integrated Fish Culture)

মিশ্র চাষ বলতে যে কোনো জাতের মাছ একত্রে একই পুকুরে চাষ করাকে বুঝায়।

আনেক সময় পুকুরে রুই-কাতলার সাথে প্রাকৃতিক ভাবেই বোয়াল মাছ কিংবা চাদা, মলা, পুটি, ডানকুনাসহ, নানা রকমের ক্ষুদে মাছও থাকতে পারে, তাই বলে এটা মিশ্রচাষ নয়।

মিশ্রচাষের জন্য যখন আমরা পুকুরে পোনা মজুদ করবো তখন কতকগুলো বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে। যেমোনঃ-

১. পুকুরে উৎপাদিত সকল স্তরের সকল ধরনের খাবারের যেন সদ্ব্যবহার হয়।
২. যে যে প্রজাতির পোনা মজুদ করবো তারা যেন পরস্পরের মধ্যে একই খাদ্য নিয়ে প্রতিযোগিতা না করে।
৩. একে অপরকে যেন খেয়ে না ফেলে।
৪. এরা যেন কোটামুটি একই সকয়কালের মধ্যে বিক্রিযোগ্য বা আহরণযোগ্য হয়।
৫. এদরে পোনা যেন সহজে পাওয়া যায়।
৬. বাজারে চাষকৃত প্রজাতির মাছের চাহিদা আছে।

পুকুরের আকার, আয়তন, গভীরতা, পানির স্থায়ীত্ব ইত্যাদির উপর মিশ্রচাষ বিভিন্ন পোনা মজুদের ধরন নির্ভর করে।

যেমন- গভীর পুকুর রুই কার্প, জাতীয় মাছের মিশ্রচাষের জন্য উপযোগী। অপরদিকে অগভীর বা মৌসুমি পুকুরের জন্য নাইলোটিকা ও মাগুর মাছের মিশ্রচাষ উপযুক্ত।

সব প্রজাতির মিশ্রচাষের জন্য একই ধরনের পরিচর্যা বা লালন-পালন ব্যাবস্থাপনা প্রয়েজ্য নয়। প্রজাতি ভেদে ব্যবস্থাপনাও আলাদা হয়।

তবে সব ধরনের মিশ্রচাষের জন্যই পুকুরে প্রস্তুতির ধাপটি একই রকম। তবে পুকুর নির্বাচনের বিষয়টি নির্ভর করে কোন কোন প্রজাতির মিশ্রচষ করা হবে তার উপর।

মিশ্র চাষ পদ্ধতি সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ (Benefits & Limitation of Integrated Fish Culture System)

মিশ্র চাষ পদ্ধতি সুবিধাগুলি হলোঃ

-পুকুরের প্রতিস্তরের জন্য সঠিক প্রজাতির মৎস্য নির্বাচন করে প্রত্যেক স্তরের কাদ্য ব্যবহার নিশ্চত করে খাদ্যের অপচয় রোধ এবং পূর্ন স্দব্যবহার সম্ভব হয়।

– মিশ্র চাষে রোগ বালাই কম।

-পুকুরে মাছের উৎপাদন একক চাষের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। সুতরাং চাষির অর্থিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয়।

অন্যদিকে মিশ্র মাছ চাষের অসুবিধাগুলি হলোঃ

– চাষাধীন প্রতিটি প্রজাতির মাছ সম্বন্ধে প্রচুর জ্ঞান রাখতে হবে।

– মিশ্র চাষের সঠিক প্রজাতি এবং মজুদের হার নির্বাচন না করতে পারলে উৎপদন ব্যাহত হবে।

– মিশ্র চাষে সম্পূরক খাদ্য ও সার সরবরাহ অধিক পরিমাণ এবং নিয়মিত হতে হবে।

-মিশ্র চষে সম্পূরক খাদ্য, অক্সিজেন গ্রহণ নিয়ে মিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে যেন কোনো প্রতিদ্ধন্ধিতা না হয়, সেদিকে কড়া নজরে রাখতে হবে।

-বলাই বাহুল্য যে চাষির বাস্তব অবস্থার উপর ভিত্তি করেই একক অথবা মিশ্র মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

-সঠিক সময়ে সব প্রজাতির পোনা প্রপ্তির অনিশ্চয়তা।

পুকুর নির্বাচন

আগেই বলা হয়েছে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং একে অন্যের ক্ষতিসাধন করে না এমন ধরনের একাধিক প্রজাতির মাছ একই পুকুরে একত্রে চাষ করা হলো মিশ্রচাষ। সব প্রজাতির মিশ্রচাষের জন্য একই ধরনের পুকুর উপযোগী নয়।

তাই প্রজাতি ভেদে পুকুরের বৈশিষ্ট্যও ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন, কার্প জাতীয় প্রজাতির- রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, মৃগেল, গ্রাসকার্প, মিররকার্প ইত্যাদি মিশ্রচাষের জন্য ২০ শতাংশ থেকে তদূর্ধ আকারের স্থায়ী পুকুর যেখানে সারা বছর ৫-১০ ফুট গভীর পানি থেকে তা বেশ উপযোগী।

তবে যে পুকুরে ৮-১০ মাস ঐ গভীরতার পানি থেকে সেখানেও হালকা ভাবে পোনা মজুদ করে মিশ্রচাষ করা যেতে পারে।

কার্পের সাথে গলদা চিংড়ির মিশ্রচষের জন্য ৪-৬ ফুট গভীরতার ২০-১০০ শতাংশ আয়তনের পুকুর উপযোগী। পুকুর বেশী গভীর হলে চিংড়ির পরিচর্যা, খাবার দেয়া, আহরণ ইত্যাদি কাজ ভালভাবে করা সম্ভব হয় না।

নাইলোটিকা ও মাগুরের মিশ্রচাষ করার জন্য ৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ অয়তনের পুকুর বেশি উপযোগী। এই চাষের জন্য পানির গভীরতা কম হলেও চলে।

৩-৫ মাসের মধ্যেই এ দু-প্রজাতির মাছ আহরণ যোগ্য হয়। তাছাড়া পানি না শুকিয়ে এ মাছ সম্পূর্নরূপে পুকুর থেকে ধরা যায় না, তাই গভীরতা বেশী হওয়া উচিৎ না। এ ক্ষেত্রে মৌসুমি পুকুরও এ ধরনের মিশ্রচাষের উপযোগী।

কার্প ও মাগুরের মিশ্রচাষের জন্য ২০-৫০ শতাংশের ৪-৭ ফুট গভীরতার পুকুর নির্বাচন করা যেতে পারে। তবে পুকুরটি মৌসুমি পুকুর না হওয়াই ভালো।

ভেটকি ও তেলাপিয়ার মিশ্রচাষের জন্য আধা লবনাক্ত উপকুলীয় অঞ্চলের পুকুর প্রয়োজন। এ পুকুর ৩০-১০০ শতাংশ আয়তনের হলে ব্যবস্থাপনা সুবিধাজনক হবে।

পুকুর প্রস্তুতি

অগাছা পরিস্কার, পানি নিস্কাশন, রাক্ষুসে মাছ অপসারণ, অচাষকৃত মাছ অপসারণ, পাড় মেরামত, তলদেশ উন্নয়ন, চুন প্রয়োগ, সার প্রয়োগ, পানি সংগ্রহ, পানির গুণাগুণ রক্ষা করা, এ বন কাজগুলো মধ্যে যে ক্ষেত্রে যে কাজ প্রয়োজন সেগুলো সম্পন্ন করার পর পরবর্তী কাজ শুরু করতে হয়।

পোনা মজুদ ও ব্যবস্থাপনা

বাস্তবপক্ষে মিশ্রচাষ শুরু হয় পোনা মজুদের সময় থেকে। একই পুকুরে একাধিক প্রজাতির পোনা পূর্বে বর্ণিত বিষয়গুলো বিবেচনা করে যখন মদজুদ করা হয় তখন তা মিশ্রচাষ বলে গণ্য হয়।

কার্প মজুদ ও ব্যবস্থাপনা

সাধারণত গভীর পুকুরে কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ করা হয়ে থাকে। আধা-নিবিড় পরিচর্যায় প্রথমে বিঘা প্রতি ৮৫০-১০০০ টি ৪-৬ ইঞ্চি আকারের রুই জাতীয় কার্প মাছের পোনা মজুদ করা হয়।

তবে ব্যবস্থাপনার মাত্রা যদি আরও উন্নত করা যায় তবে বিঘা প্রতি ১০০০-১৩০০ টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে।

প্রতিটি স্তরে খাবারের পরিমাণ গুণাগুণ এবং উপাদান এক ওকম নয়। তাই বিভিন্ন প্রজাতির যে পরিমাণ পোনা মজুদ করা হবে, তা একটি নির্দিষ্ট অনুপাতেই করা উচিত।

তিন প্রজাতির মিশ্রচাষ

কাতলা, রুই, এবং মৃগেল তিন প্রজাতির মিশ্রচাষ মজুদ করা হয়। শতকরা ৪০টি কতলা, ৩০টি রুই এবং ৩০টি মৃগেল এক্ষেত্রে মজুদ করা হয়ে থাকে।

দেশি এই তিন প্রজাতির কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষে সাধারণত বছরে বিঘা প্রতি ৬০০-৭০০ কেজি মাছ উৎপন্ন হয়।

তবে পানির গুণাগুণ রক্ষাসহ, যথারীতি সার ও খাদ্য প্রয়োগের মাধ্যমে পুকুর বাবস্থাপনার কাজ সম্পন্ন করতে পরলে আরও বেশি উৎপাদন সম্ভব।

বিভিন্ন সময় পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে দেশী তিন প্রজাতির কার্চের সাথে বিদেশী আরও তিন বা চার প্রজাতির কার্প মাছ চাষ করলে একই ব্যবস্থানায় বেশী ফলন পাওয়া যায়।

ছয়-সাত প্রজাতির কার্পের মিশ্রচাষ

পুকুরে উৎপাদিত খাদ্যমালার আরও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চত করে মাছের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলে হয়-সাত প্রজাতির দেশী বিদেশী কার্প একত্রে চাষ করতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের মজুদের হার মেনে চলা উচেৎ।

এলামেলোভাবে পোনা মজুদ করলে আশানুরূপ ফলন না পাওয়াই যাবে না, বরং তিন প্রজাতির মিশ্রচাষ থেকেও ফলন কমে যেযে পারে।

সিলভার কার্প, কাতলা ও বিগহেড কার্প পুকুরের উপরের স্তরের মাছ। পুকুরে যদি মধ্য ও নিচের মাছের জন্য সাধারণ মানসম্পন্ন সম্পূরক খাদ্য যেমন-খৈল, ভুষি, কুড়া, সবুজ আগাছা প্রয়োগ করা হয়, সেক্ষেত্রে উপরের স্তরের মাছের পোনা পরিমাণ ৪০% হওয়া উচিত।

পুকুরে রাসায়নিক সার দিলে যদি তাড়াতাড়ি ৩ থেকে ৪ দিন মধ্যে পানির রং হালকা সবুজ হয় তবে বুঝতে হবে পানি বেশ উর্বর। এক্ষেত্রে উপরের স্তরের মাছগুলোর সংখ্যা হবে ৪৫% অনুর্বর কিংবা কম উর্বর পুকুরে সম্পূনক খাদ্য নির্ভর মাছের পোনার অংশ বেশি হয়।

সম্পূরক খাদ্য প্রিয় মাছগুলো হলেঅ রুই, মৃগেল, কমন/মিরর কার্প এবং গ্রাসকার্প। গ্রাসকার্প জলজ আগাছা ছাড়াও জমিতে জন্মানো নরম ঘাসে, লতাপাতা, শাকসব্জি অংশ ইত্যাদি খেয়ে থাকে।

এসব বাইরে থেকে সংগ্রহ করা খাদ্যগুলোকে আমরা গ্রাসকার্পের জন্য সর্ম্পরক খাদ্য বলে বিবেচনা করতে পারি।

পুকুরের ইৎপাদিকা শক্তি, নিয়মিত সর্ম্পরক খাদ্য প্রয়োগের সামর্থ্য এ সবের উপর নির্ভর করে উপরে বর্ণিত পোনা মজুদের অনুপাত কিছুটা রদবদল করে পুনঃনির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

বিগহেড এর পোনা না পাওয়া গেলে তার পরিবর্তে সমসংংংখ্যক কাতলা ছাড়তে হয়। তবে সর্বমোট পোনার সংখ্যা সাধারণত ৮৫০ – ১০০০ অপরিবর্তিত রাখা হয়।

এ ধরনের মিশ্রচাষ পুকুর ব্যবস্থাপনা ও মাছের পরিচর্ষা সঠিক মত করলে ৬ – ৭ মাসের মধ্যে কিছু কিছু মাছ বিশেষত সিলভারকাপ, বিগহেড কার্প, মিররকার্প এমন কি গ্রাসকার্প বিত্রিযোগ্য বা আহরণযোগ্য হয়।

এখন ঐ প্রজাতির ৫-৬ ইঞ্চি আকারের পোনা মজুদ করা হলে ফলন বৃদ্ধি পায়। এমনিভাবে শাচ আহরণ এবং তার পরিবর্তে পুনরায় পোনা মজুদ করলে বছর শেষে পুকুরে বিঘা প্রতি পোনা মজুদের পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ১৩০০টি।

বছর শেষে সার্বিক মাছেল উৎপাদন হয় হেক্টর প্রতি প্রায় ৬-৮ মেট্রকটন। ভাল ব্যবস্থাপনায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ টন পর্যন্তও হয়ে থাকে।

এ থেকে দেখা যাচ্ছে, ত প্রজাতির বদলে ৬-৭ প্রজাতির কার্প মিশ্রচাষ বেধ লাভজনক।

ছয় প্রজাতির সাথে রাজপুটির মিশ্রচাষ

পূর্বে বর্ণিত ৬-৭ প্রজাতির মিশ্রচাষে বিগহেডের পরিবর্তে প্রতি বিঘায় ৩০০-৪৫০ টি ২-২.৫ ইঞ্চি আকারের রাজপুটির পোনা মজুদ করলে ৩-৫ মাসের মধ্যেই এগুলো বিক্রিু যোগ্য ২০০-৪০০ গ্রাম আকার ধারণ করে।

অর্থাৎ আয়তনের জলাশয় থেকে ৩-৫ মাসে ৫০-৭৫ মেজি মাছের একটি বাড়তি উৎপাদন পাওয়া যায়। এ মাছের জন্য চাউলের কুড়া বা গমের ভুষি বা উইপোকার বাসা শুকনা অবস্থায় পুকুরে ছিটিয়ে দিলেই চলে।

তা ছাড়া ক্ষদে পানা এদরে প্রিয় খাদ্য। পার্শ্ববর্তী ডোবা, কিংবা ধান ক্ষেত থেকে এ পানা সংগ্রহ করা যায়। এ ঘরনের ক্ষুদে পানার চাষও করা যায়।

কার্পের সাথে গলদা চিংড়ির চাষ

এ ধরনের মিশ্রচাষ পুকুরে মৃগেল, কমন/মিরর কার্পম কালিবাউস এসব তলায় বসবাসকারী মাছ মজুদ করা যাবে না।

রুই মাছের সংখ্যাও কমিয়ে দিতে হবে। আগেই বলা হয়েছে কোনো পুকুরের পোনা মজুদের পরিমাণ ও হার নির্ভর করে ঐ পুকুরের বাস্তব উৎপাদিকা শক্তি এবং অন্যান্য অবস্থার উপর।

কার্প চিংড়ির মিশ্রচাষের বিষয়টি দ’ভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে,

১. কার্পচাষকে প্রধান্য দিয়ে চিংড়ির বাড়তি চাষ,

২. চিংড়ির চাষকে প্রাধান্য দিয়ে কার্পের বাড়তি চাষ।

কার্প-চিংড়ি মিশ্রচাষের জন্য পোনা মজুদের সম্ভাব্য হার নিচে দেখানো হলো।

কার্পের সাথে চিংড়ি চাষ করলে সম্পূরক খাদ্যের মান উন্নত করতে হবে। এদের সম্পূরক খাদ্যে প্রণীজ আমিষের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য খৈল ১০-২০% ও চালের কুড়া/গমের ভূষির ৪০-৫০ সাথে শুটকির গুড়া ১০-১৫, ১০-১৫% হাড়ের গুড়া বা ঝিনুকের গুড়া ৯-১০% মিশাতে হয়।

এছাড়া ভিটামিন প্রিমিক্স ০.২৫% হারে এবং লবন ০.২৫% হারে মিশাতে হয়। উপরে স্তরের মাছগুলোর জন্য নিয়মিত জৈব সার এবং রাসায়নিক সার দেয়া হয়ে থাকে। গ্রাসকার্প মজুদ করলে নরম ঘাস-পাতা এবং জলজ আগাছা খেতে দিতে হয়।

জলজ আগাছা দিলে তা ভালভাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে যাতে তার সাথে অন্য কোনো মাছের বাচ্চা এবং পোকা মাকড় চলে না আসে। আগাছাগুলো কিছুক্ষণ ১০-২০ মিনিট লবণ পানিতে ডুবিয়ে রাখলে কিংবা রোদে কিছুক্ষণ রেখে দিলে এ সম্ভাবন কম থাকে।

কার্প চিংড়ির মিশ্রচাষে চিংড়ি চাষকে প্রধান হিমেবে বিবেচনা করলে সেক্ষেত্রে পুকুরে বর্ণিত খাদ্য উপকরণগুলো মিশিয়ে সম্পূনক খাদ্য তৈরি করে প্রয়োগ করতে হয়।

আমি কৃষিবিদ তানজিম আহমেদ, কৃষি বিষয়ক ব্লগার।

You cannot copy content of this page